Monday, May 6, 2019

এক অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প " ইতিউতি " / A emotional love story

Alone girl


সেদিন স্কুলের পিছনে গলিটা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম......
গলিটার নাম ইতিউতি....
গলিটার এমন অদ্ভুত নামের কারন আমার জানা নেই....
তবে গলিটা আমার ভীষন পরিচিত.... কারন গলির পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা এই দোতলা পাকার স্কুলটাতেই  কেটেছে আমার শৈশব...




দাঁড়ালাম গিয়ে ঝাঁকড়া আমগাছটার সামনে.....
সেই একই রকম আছে আমগাছটা ঝাঁকরা ঝাঁকরা ডাল.... কিছু বকুল এসেছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে.....
আমগাছটার তলাটা বেশ ভালো করে বাঁধানো...
গিয়ে বসলাম পাকার বেদীটাতে....
এখন স্কুল চলছে তাই আম গাছের তলা একদম ফাঁকা..... এটাই টিফিনের সময় অথবা স্কুল ছুটির সময় হলে এখানে ভিড় টা রীতিমত দেখার মতন হতো..... কিশোর কিশোরী দের হাত ধরে ঘোরাফেরা করার নিষিদ্ধ পল্লী এটা....
কিছুক্ষণ চুপচাপ হয়ে থাকার পরে আম গাছটাকে প্রশ্ন করলাম

- কিরে কেমন আছিস?

আমগাছটাও হেসে উত্তর দিলো

- কেন বেশ ভালই তো....

হেসে বললাম

-আমায় ভুলে গেছিস বুঝি ?

তার সহাস্য উত্তর

- ভুলব কেমন করে????
  তুই এখানে সুমনের সাথে আসতিস দুজনে হাত ধরে 
  ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বসে থাকতিস....
  এসব কি আর ভুলা যায়....
  আজ তোদের মত অনেকেই আসে...বিশ্বাস কর,
  কিন্তু না রে তোদেরকে ভুলিনি.......

অনেক বছর পর আজ আবার মনে পড়ল সুমনকে... কষ্টের স্মৃতি হিসেবে নয় প্রথম না পাওয়া প্রেম হিসেবে.... প্রথম ভালোলাগার আবেগ হিসাবে...
স্কুল লাইফের প্রেম আমাদের....
সত্যি সুমন যেন একটু অন্য রকমের ছিল ওর টানা টানা দুটো চোখ, উস্কোখুস্কো চুল, স্কুল ড্রেসের গোটানো কলার সবই যেন আমাকে ওর দিকে টেনে নিয়ে যেত.....
আকর্ষিত হয়ে ছিলাম
কিশোরী বয়স আকর্ষণটা তাই তখন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার...
ওই প্রথম পলাশ ফুল দিয়ে ওর মনের কথাটা জানিয়েছিলো....
পলাশ ফুলের থেকেও বেশি লাল হয়ে গিয়েছিল আমার গালদুটো....
অনেকক্ষণ পর আস্তে আস্তে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম.... একমুঠো পলাশ ফুল নিয়ে সেদিন ফিরেছিলাম বাড়ি.... বারান্দায় বসে তাদের উল্টে পাল্টে দেখেছিলাম.... সেগুলোর মতো মহামূল্যবান বস্তু তখন আমার কাছে আর কিছুই নেই.....
রোজ টিফিনে, ইস্কুল শেষের পরে এখানে এসে বসতাম আবার অনেক সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুজনে বসে বসে কত যে ভবিষ্যতের ভাবনা চিন্তা করেছি তার শেষ নেই সেসব মনে পড়লে এখন বড্ড ছেলেমানুষি মনে হয়.... লাল-নীল চিরকুটে লেখা ভালোবাসার শব্দগুলো বাড়িয়ে দিতো হৃদস্পন্দন....
এই বেদীতে শুয়ে আমার কোলে যখন ও মাথা রাখতো তখন সদ্য কৈশরে পা দেওয়া এই আমি আবেগে ভেসে যেতাম....
ওর চুলের ফাঁকে ফাঁকে লুকোচুরি খেলতো আমার আঙুলগুলো..... ও মুখ তুলে তাকালেই লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকতাম...... আর সপ্তাহের ছুটির দিন হিসাবে বরাদ্দ রবিবার গুলো তখন আমার কাছে ছিলো এক একটা জ‍্যান্ত অভিশাপের মতো....
ওর স্কুল  ড্রেসের বোতাম,কয়টা চকলেট এর খাপ, কয়েকটা লাল নীল চিরকুট, কিছু আম বকুল আর কয়েকটা শুকনো পলাশ এখনও তোলা আছে আমার ঘরের উত্তর কোনের তাকের কাঠের বাক্সটায়....
কাগজের মোড়কে মুড়ে কিছুটা লালা আবির আমার গালে লাগিয়ে দেওয়ায় আমার লজ্জা রাঙ্গা লাল টুকটুকে মুখটা আজও মনে পড়ে.....
সত্যি প্রথম প্রেম বড্ড আবেগি হয়.......❤️
আমাদের মাস কয়েকের প্রেমটা বছর কয়েকে পৌঁছাবার আগেই মায়ের হাতে পড়ে যায় একটা লাল চিরকুট..... আর তার উপর আমার বিচ্ছিরি মার্কসিটটা যখন আমার হাত ধরে ঘরে ঢোকে তখন মা নিজের নাম গৌরি পাল্টে একদম চন্ডি হয়ে ওঠে......
পাঠিয়ে দিলো কলকাতায় ছোট পিসিমনির বাড়িতে.... সুমনকে কিছু জানাবার সময়টুকু পেলাম না.....

কদিন খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করিনি তারপর চিংড়ির মালাইকারির গন্ধ পেয়ে অনশন টাও বন্ধ করলাম......
দুই বছর পর যখন বাড়ি ফিরলাম তখন আর সুমনকে পাইনি কাছে..... শুনলাম ওর বাবার বদলি হয়ে গেছে কোথাও..... ঠিক কোথায় সেই খবর জোগাড় করার এলেম তখন ছিলো না.....

কে জানে কোথায় গেছে....
হয়তো এতদিনে আমায় বেবাফা টাইপের কিছু একটা ভাবে.... হয়তো আমার নাম টা মনে পড়লে নামের আগে দুটো গালাগালি বসিয়ে দেয়.... আবার এটা নাও হতে পারে.... হয়তো বা আমারই মতন প্রথম প্রেম হিসাবে স্মৃতি গুলো কে যত্ন করে তুলে রেখেছে.....
কিন্তু সেসব অনেক বছর আগেকার কথা সেসব এখন থাক .....
 এখন আমরা দুজনেই অনেক বড় দুজনের আর কোনো যোগাযোগ নেই....
কেমন আছে... কি করছে... কিছুই জানিনা.... এমনকি কোথায় আছে সেই ঠিকানাটাও অজানা... কারণ আজ আমরা অনেক বড়....
পড়ে খবর পেয়ে ছিলাম সুমন নাকি কোনো একটা বেসরকারি কোম্পানীর ম‍্যানেজারের পোস্ট টা জোগাড় করেছে..... মোটা মাইনের বেতনও পায়....
হালে বিয়েও করেছে.... মেয়েটা নাকি খুব মিষ্টি দেখতে.....
আমারো সম্বন্ধ আসছে.... হয়তো কদিন পরেই ঝুলে পড়বো কোনো কাকু কাকু গোছের সরকারি চাকরি করা পাত্রের গলায়.... ছেলেটার সাথে নয় বরং তার ওই সরকারি চাকরি টার সাথেই বাবা কনে বিদায় করবে....
না এত সব ভাবনা ঠিক হচ্ছে না....
তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ির দিকে চলে এলাম বলা যায়না প্রথম প্রেম তো যদি আবার আবেগে ভেসে যাই.... 😂
আজ প্রায় বছর পাঁচেক কেটে গেছে কিন্তু আম গাছটা এখনো রয়েছে এখনও রয়েছে আম গাছের তলায় পাকার বেদীটা....  আর তাতে প্রেম করার মতন কিশোর-কিশোরীর অভাব নেই শুধু আমাদের গল্পটা ওই আমগাছের তলাতেই শেষ হয়ে গেছে....
বাল‍্য প্রেমের ব‍্যাপারটাই আলাদা.... ওতে মিলন কোনোদিনও কপালে থাকে না.... কিন্তু সবথেকে বেশি আবেগ থাকে ওতেই...
তাতে অবশ্য আমার কোনো আফসোস নেই কারণ কিছু প্রেম প্রিতী তে নয় স্মৃতিতে থাকে......
******************************************

3 comments:

  1. খুব সুন্দর একটি রোম্যান্টিক গল্প। এই ধরনের রোম্যান্টিক গল্প, মোটিভেশনাল উক্তি, শিক্ষামূলক গল্প এবং রহস্য গল্প পড়তে ভিজিট করুন অনুপ্রেরণা ডটকম

    ReplyDelete
  2. এটি একটি অসাধারন গল্প। এমনই সুন্দর সুন্দর গল্প ও প্রেমের কবিতা পড়ুন। মন খুশি হয়ে যাবে।

    ReplyDelete