Sunday, April 21, 2019

ওগো বিদেশিনী পর্ব - ২


ছোট্ট স্টেলা অবাক হয়ে দেখলো, এখানে সবই যেন আলাদা.....
লোক গুলো কেমন যেন কালো... কেমন অর্ধ কাপড় পড়ে... বাকি শরীর ফাঁকা....

 এটা কি ভাষা? বুঝতে পারল না সে, কিছুই জানেনা সে ইংলিশ ছাড়া।



অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে.... কিন্তু না কিছুই বোধগম্য হলোনা তার.... তখন সে গাড়িতে উঠতে উঠতে বাবাকে প্রশ্ন করল.....
তার কৌতূহল মেটাতে বাবা যা বললেন তাতে মন খারাপ হয়ে গেল স্টেলার... এখানে নাকি সবাই এই ভাষায় কথা বলে.... বাংলা ভাষা....
তাহলে সে কিভাবে কারো সাথে কথা বলবে সেটাই বুঝতে পারলো না.....


গাড়ির জানলা দিয়ে অবাক হয়ে নতুন পৃথিবী কে দেখতে থাকলো স্টেলা....
এভাবে দেখতে দেখতে তাদের নতুন ঘরে এসে পৌঁছালো সে.....


House garden


গাড়ি থেকে নেমে দেখল একটা দোতলা বাড়ি, আর তার সামনে একটা বিরাট বাগান.....
বাগান খুবই পছন্দের তার.....
বাগান দেখেই মনে পড়ল আগের বাড়িটার বাগানে সে একটা ছোট্ট গোলাপের গাছ লাগিয়েছিল নিজের হাতে.... গাছটা বোধহয় এবার যত্নের অভাবে মরেই যাবে..... শখের গাছটার মরে যাবার কথা চিন্তা করেই দুঃখে ভরে গেল মনটা...... মুখ নিচু করল সে....
নতুন ঘর আর সে আনন্দ করে ঘুরে দেখতে পারলো না.........
মা জিজ্ঞাসা করায় স্টেলা বললো

-  মা আমার গোলাপ গাছটার কি হবে? সেটা কি মরে যাবে?

 মেয়ে কে খাওয়াতে খাওয়াতে তার মা উত্তর দিল

- না মরে যাবে কেনো?
 সেই বাড়িতে তো নতুন কেউ থাকতে আসবে...
 আর তারাই দেখাশুনা করবে তোমার গাছটার.....

সে নিজের হাতে গাছটা যত্ন নিতে পারবে না ঠিক ই তবুও গাছটা বেঁচে থাকবে এটা শুনে কিছুটা শান্ত হল সে....
তার মা বুঝল মেয়ের মন খারাপের কারণ....
খাবার পর তাকে ঘুমোতে যেতে বলল তার মা....
তার জন্য উপরের তলায় একটি ঘর ধার্য করা হয়েছে...
তাই স্টেলা খেয়ে উঠে উপরে চলে গেল.....


বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার বন্ধু, স্কুল, বাগান এসবের কথা ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে এলো.... এভাবেই একসময় ক্লান্ত স্টেলা ঘুমে ঢুলে পড়ল.....



ঘুম যখন ভাঙলো তখন ভোরের আলো সবে ফুটেছে.... বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার পাশে গেল সে.....
তারপর জানলার কাঁচ সরিয়ে দেখল সুন্দর প্রকৃতি...
শান্ত, নির্মল এই প্রকৃতির ছবি দেখে মনটা ভরে গেল তার.....


এই জানালাটা দিয়ে তাদের নতুন বাড়ির বাগানখানা দেখা যায়.....
 ফুলের গন্ধ ভাসছে বাতাসে.....
সে দেখল তাদের বাড়ির আশেপাশে আর কারো বাড়ি নেই তেমন... বরং রয়েছে একটা সবুজ বড় মাঠ.... আর মাঠ এর এক ধারে একটা ছোট্ট জলাশয়.....
জলাশয়ের ধারে রয়েছে কি যেন একটা গাছ...
গাছটা বেশ বড় আর কি সুন্দর ফুল হয়েছে তাতে....


এভাবে জানালায় দাঁড়িয়ে কতক্ষন যে কেটে গেল বুঝতে পারিনি সে....... মায়ের ডাকে নিচে গেল স্টেলা..... একটা নতুন স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে তাকে.....
তাই তৈরি হয়ে স্কুলে চলে গেল স্টেলা....


স্কুলে এসে দেখলো তার মতো আরো অনেকেই রয়েছে, যারা ইংল্যান্ড থেকে এখানে এসেছে.... কারণ তারাও ইংলিশে কথা বলে... কিন্তু সবাই না.....
সকলের সাথে কথা বললেও বন্ধুত্ব হলো না কারো সাথে....

এভাবেই দিন কাটতে থাকলো স্টেলার......
 একলা সময় কাটানোর জন্য গল্পের বই হয়ে উঠেছে তার প্রধান সাথী..... আর বাগানের ওই ছোট্ট খরগোশ টা......


এভাবেই কেটে গেল বছর দুয়েক......

 এই দুই বছরে এক রকম ঘরে বন্দি করে ফেলেছে সে নিজেকে......
কেবলমাত্র স্কুল ছাড়া আর কোথাও তেমন যায় না সে..... যেখানে যাবার থাকে, বাবা-মা যায়....
সে বাড়িতেই থাকে.......
ভোর বেলা জানলার পাশে..... দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে তার বাগান ও ছোট্ট খরগোশ.... আর বাকি সময়টুকু কাটে এ মুখ লুকিয়ে.....
 এভাবেই কাটছে দিনগুলো......

 স্টেলার দিনতো কাটছে কিন্তু তাকে নিয়ে তার বাবা ও মায়ের চিন্তা কিন্তু বাড়ছে.....
মেয়ে কারো সাথে মিশছে না.....
কোথাও যাচ্ছে না.....
 একলা হয়ে যাচ্ছে....
 কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তারা......

এভাবেই দিন কাটছে..... কেটেও যেত এভাবেই.....
  কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে লাইব্রেরী না গিয়ে জানলার পাশে এসে দাড়ালো সে......
দেখলো সামনের মাঠটাই অনেকগুলো ছেলে কি যেন একটা খেলা খেলছে......
অবাক হলো সে.... এতদিন ধরে কই দেখিনি তো....
তাদের খেলাটা দেখতে বেশ ভালই লাগলো.....
 এখন স্কুল থেকে ফিরে বাকি সময়টা কাটে তার এই জানলায়..... খরগোশ টা কে কোলে করে তাকে আদর করতে করতে খেলা দেখে....
তার ইচ্ছে করে ওদের সাথে খেলতে.....
কিন্তু ওদের ওই বাংলা ভাষা বোঝে না সে....য়
 দাঁড়িয়ে থাকে জানলায়.... রোজকার অভ্যেস এর আবার কিছুটা পরিবর্তন........


এখন তার সব থেকে বেশি সময় কাটে এই জানলায়.......
গল্পের বই প্রায় চলে গেছে...... আর তার জায়গায় স্থান পেয়েছে এই জানালা..........

No comments:

Post a Comment