আজ আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে বাইকের স্পিড টা 40 -এর ঘরে নামিয়ে আনলাম..... আমি ভিজছি বৃষ্টিতে..... দূরের লাইট গুলো সংকেত দিচ্ছে আমার গন্তব্য আগত......
আজ আমার গন্তব্য অঞ্জলি দের বাড়ি.....
অঞ্জলি অর্থাৎ আমার প্রেমিকা..
না না প্রেমিকা নামটা এখন আর ওর সাথে ঠিক যায় না.....
অঞ্জলি আমার প্রাক্তন.....
ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল পাঁচটা বছর আগে কলেজ লাইফে....
তখন আমাদের দুজনেরই অল্প বয়স
তাই আবেগের স্রোতে ভেসে গিয়ে প্রেমে পড়াটা কোনো অবাক করা বিষয় ছিল না....
তাহলে গল্পটা প্রথম থেকেই শুরু করি....
আমি সৌরভ দেখতে মোটামুটি হলেও পড়াশোনায় কিন্তু মোটামুটির থেকেও খারাপ অবস্থা অর্থাৎ গলে গালে পাস যাকে বলে....
ছোট থেকেই পড়াশোনায় খারাপ.... উচ্চমাধ্যমিক টা কোনক্রমে পার করলেও ফার্স্ট ইয়ার থেকে পড়াশোনায় আমার আর কোন সদিচ্ছা ছিল না......
বাবা মায়ের সেই নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না কারণ আমি ওনাদের একমাত্র সন্তান...
লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা যাওয়া,
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,
সক্রিয়ভাবে কলেজের রাজনীতিতে যোগ এসবের ফল যা হয় তাই হলো ফেল করে গেলাম..... অবশ্য সে নিয়ে আমি তেমন চিন্তিত ছিলাম না কারণ পড়াশোনাটা নিয়ে আমি সত্যিই কোন দিন মাথা ঘামায়নি...
এরপর এই গল্পের নতুন মোড় ঘুরল যখন অঞ্জলি আমাদের ডিপার্টমেন্টে আমাদের ক্লাসে ভর্তি হল....
প্রথম দিনই ওর মুখটা বড্ড মায়া জড়ানো মনে হয়েছিল.... কেন কে জানে....
কিন্তু ওর মুখটা দেখে মনে হয়েছিল বড্ড আপন সত্যি...
আমি আমার অভ্যেস মতই প্রথম দিনই একটা গোলাপ নিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম.....
ও প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও গোলাপটা হাত থেকে টেনে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল.....
তারপর সপাটে এক চড় মেরে চলে গিয়েছিল ক্লাসের দিকে.....
আর আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম.... কারণ আমাকেও যে কোন মেয়ে চড় মারতে পারে সেটা ছিল আমার ধারণারও বাইরে.....
এর আগে যতগুলো মেয়েকে প্রপোজ করেছি কেউ এমন ভাবে আমায় চড় মেরে যায়নি..... আর আমাকে যারা রিজেক্ট করে তাদের প্রত্যেকের সাথে আমি প্রতিশোধ নিতাম......
কিন্তু কেন জানি না অঞ্জলীর সাথে পারলাম না.....
ওর প্রতি আমি দুর্বল.....
প্রতিশোধ নেওয়া তো দূরেই থাক ঘুরে ওকে দেখার জন্য রোজ কলেজ যাওয়া শুরু করলাম.....
ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম সুযোগ পেলেই আর ও রীতিমতো বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিত....
অথবা চলে যেতো আমার চোখের আড়ালে....
অঞ্জলি আবার পড়াশোনায় খুব সিরিয়াস....
ওকে দেখতে পাওয়া যায় ক্লাস রুমে আর লাইব্রেরীতে....
এছাড়া অন্য কোথাও ওকে খুঁজে পাওয়া দায়....
তাই ওকে একটু দেখার আশায় আমি রোজ ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে থাকলাম... স্যাররা কম অবাক হলো না... কারণ আগের বছর আমি তেমন ভাবে ক্লাস করিনি কিন্তু দাদাগিরিতে বেশ নাম কামিয়ে ফেলেছি....
একদিন আবার ওকে দেখবার জন্য কলেজের লাইব্রেরীতে গিয়ে বসলাম... লাইব্রেরীয়ান তো প্রায় বেহুঁশ হওয়ার অবস্থায়.....
সত্যি আমি লাইব্রেরীতে ভাবা যায়...
না লাইব্রেরিয়ানের সত্যি কোন দোষ নেই...
আমার সাঙ্গপাঙ্গ গুলো ওর প্রতি আমার ভক্তি দেখে ওকে তো বৌদি বলে ডাকতে শুরু করে দিয়েছিল.....
ও তাতে বিরক্ত হতো প্রচন্ড কিন্তু মুখের ওপর কিছু বলতে পারত না....
যতই হোক দাদাগিরিতে নাম কামিয়ে বেশ একটা দাদা দাদা ভাব আছে কলেজে তাই সাহস করতো না হয়তো.....
এরপর একদিন ক্যান্টিনে বসে বসে সবাই মিলে পাওভাজি তে কামড় দিচ্ছি...... ঠিক সেইসময় বিল্টু অর্থাৎ আমার এক সাঙ্গ দৌড়ে এলো আমার কাছে...
তার হাতে একটা কাগজের টুকরো... তাকে হাঁপাতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম
- কিরে কি হলো?
সে একদম দাঁত বের করে উত্তর দিল
- দাদা বৌদি চিঠি দিয়েছে
শুনে বুকটা ধড়াস করে উঠল...
তারপর ভাবলাম একটু মজা করছে নাতো...
কিন্তু না বিলু তৎক্ষণাৎ আমার ভুল ভাঙিয়ে এক টুকরো সাদা কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিল....
বাকিরা ততক্ষণে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে.....
কয়েকজন তো পার্টি ও চেয়ে বসেছে....
আর আমি তখন ছোট্ট চিরকুট টা খুলে নিয়ে তাতে ডুব দিয়েছি....
চিঠিতে বেশি কিছু তেমন ভাবে লেখা ছিল না.... শুধু লেখা ছিল একটা কফি শপের ঠিকানা আর বিকেল চারটে....
অবাক হলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম ও আমার সাথে দেখা করতে চাইছে... আমার মনে তখন বেটা লাড্ডু ফুটা... ওদেরকে ট্রিট টা দিয়েই দিলাম নাহলে বড্ড কিপ্টেমি করা হতো.....
সত্যি আজকে আমি খুব খুশি....
সাঙ্গপাঙ্গ গুলো ওদের নিজেদের জামা, বডি স্প্রে এমনকি আমাকে হাত ঘড়ি টাও ধার দিয়েছে পড়ে যাওয়ার জন্য...
যতই হোক ওদের বৌদির সাথে প্রথমবার দেখা করতে যাচ্ছে কিনা....
আমিও এক ঘন্টা আগে থেকে সাজতে আরম্ভ করেছি....
না পারফেক্ট লাগছে.... যে কোন মেয়ে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে...
তা প্রেমে পড়ুক আর না পড়ুক দ্বিতীয়বার ফিরে তাকাবে এই গেরেন্টি আমি দিতে পারি....
আমি ভেবেছিলাম ওর আগেই পৌঁছাবো কিন্তু জাম্প এর জন্য ঠিক 10 মিনিট লেট...
ঢুকেই দেখলাম বিরক্ত মুখে বসে আছে অঞ্জলি কোণের ধারের একটা টেবিলে.... মনটা আবার খুশি হয়ে উঠল কনের ধারের টেবিল মানে নিশ্চয় কিছু বলবে.....
কিন্তু টেবিলে বসার পর কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ও যে কথাগুলো বলেছিলো সেগুলো শুনবার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না......
ও আমাকে সরাসরি ভাবে জানিয়ে দেয় যে ও আমায় ভালোবাসে না এবং কোনদিন ভালোবাসতে পারবেও না....
ও নাকি কোন এক ফেমাস পলিটিশিয়ান এর মেয়ে.....
ওর বাবার নাকি খুব নামডাক....
আমি যাতে কোনো মতেই ওর সাথে না জড়াই তাই আমাকে সাবধান করে দিয়ে গেল......
সেদিন কফির কাপে আমার ঠোঁট পুড়েছে....
আমার খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ও বিলটা পেমেন্ট করে বেরিয়ে গেল....
মেয়েটা সত্যি ভীষণ মিজাজি....
কিন্তু আমি এবার ওর মিজাজের প্রেমে পড়েছি....
আমার সাঙ্গপাঙ্গ গুলো কে গিয়ে বলতেই ওরাও বেশ কিছুটা হতাশ হলো... তবে বললো আমি ওদেরকে ট্রিটটা যখন দিয়েছি ওরা আমার লাভ স্টোরি টা ঠিক সেটেল করে দেবে....
ওদের কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো কিন্তু ভর্সা পেলাম না ঠিক.... যে মেজাজি মেয়ে ওরে বাবা.....
না আমি হাল একবারই ছেড়ে দিলাম না.....
পরেরদিন থেকেও ওকে একই ভাবে অনুসরণ করতে লাগলাম কারণ ওর পিছু হাটতে আমি কখনোই ভুলি না আশা করি সারা জীবন ওর পিছু হাটতে ক্লান্ত হবোও না.......
কিন্তু তার জন্য ওর অনুমতি দরকার আর সেই অনুমতি পাওয়ার জন্যই এত চেষ্টা.....
আমার চেষ্টা চলতেই থাকলো....
কখনো কখনো আমার সাঙ্গপাঙ্গ গুলোকে দিয়ে গোলাপ ফুল, ছোটো ছোটো টুকরো টুকরো চিঠি ওর কাছে পাঠাতে থাকলাম... ভাবলাম যদি বরফ গলে... কিন্তু না এ দেখছি এক্কেবারে সুমেরু প্রদেশের বরফ এত সহজে গলবে না....
পরের দিন কলেজে ঢোকার মুখেই দেখি অঞ্জলি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আর সিকিউরিটি গার্ড প্রচন্ড চেঁচাচ্ছে....
কাছে গিয়ে জানতে পারলাম ও নাকি আইকার্ড খুঁজে পাচ্ছে না....
সিকিউরিটি ওকে গেটের ভেতরে ঢুকতে দিতে সম্মত নয়.....
আমি গিয়ে মধ্যস্থতা করলাম....
কলেজে আমার একটা নামডাক আছে... সেই খাতিরে সিকিউরিটি ওকে কিছুই বলল না ছেড়ে দিল.... উল্টে আমি বলে দিলাম
- এটা তোমার ম্যাডাম....
ম্যাডাম কে এরপরে কখনো বিরক্ত
করবে না....
সিকিউরিটি মুচকি হেসে টুপিটা নামিয়ে নিয়ে চলে গেল... আর অঞ্জলী আমার দিকে তাকিয়ে আছে বড় বড় চোখ করে যেন আমাকে ভৎস করে দেবে....
আমি একটু দেঁতো হাসি দিয়ে ঢুকে পড়লাম....
না ওই চোখের সামনে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না.....
আমি আজ আবার ওর রাগের প্রেমে পড়েছি....
সত্যি মেয়েটা কিন্তু খুব রাগী...
জানিনা আর ওর কিসের কিসের প্রেমে পড়বো কিন্তু মনে হচ্ছে ও আমায় পাগল করে ছাড়বে.....
ও কলেজ শেষে বাড়ি ফিরবার সময় সিকিউরিটি গার্ড ওকে দেখে একটা মস্ত সেলাম ঠুকে দিল....
ও খুব রেগে আছে বুঝতে পারছি কিন্তু আমি ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছিলাম....
ও চলে যাওয়ার পর সিকিউরিটি গার্ড এর সাথে গিয়ে জমিয়ে গল্প শুরু করলাম........
তারপর থেকে প্রতিদিন সুযোগের অপেক্ষায় আছি কিন্তু না মেয়েটা আমাকে পাত্তাই দেয় না.....
কিন্তু সুযোগ একদিন পেয়েই গেলাম....
আজ কোন এক রাজনৈতিক পার্টি বন্ধ ডেকেছে তাই বাস বন্ধ....
এদিকে আজ কলেজে পরীক্ষা তাই পৌঁছাতেই হবে...
রাস্তায় আসতে আসতে দেখলাম অঞ্জলি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে... পাশেই ওর খারাপ হয়ে যাওয়া স্কুটি টাও দাঁড় করিয়ে রেখেছে....
আমি মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে পড়লাম....
না এবার ওকে লিফট দেওয়ার কথা বলতে তেমন আপত্তি করলো না....
তবে আমিও ভদ্র ছেলের মতো এসেছি.. গোটা রাস্তায় কোনোভাবেই ওর পাশ ঘেঁষে বসার চেষ্টা করিনি আর ব্রেক এ তো একেবারে হাত দিইনি.....
কলেজে পৌঁছে বাইকটা স্ট্যান্ড করতেই অঞ্জলি নামল.... নেমে আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করল
- এত স্পিডে কেউ বাইক চালায় ?
আমি যদি পড়ে যেতাম....
আর ব্রেকে কেন হাত দেননি আপনি ??
আমি মুচকি হেসে বললাম
- ভয়ে
- কীসের ভয়?
- তুমি আবার যদি বলো তোমার কাছে
আসার জন্য আমি ব্রেকের ব্যবহার
করেছি...
তা কি আর শুনতে ভালো লাগতো বলো
ও দেখলাম মুচকি হেসে চলে গেল...
আমি মনে মনে ভাবছি হাসি তো ফাসি ডায়লগ টা কি ওর জন্য প্রযোজ্য... কে জানে মেয়েটাকে চেনা বড্ড দুষ্কর....
সেদিন ক্লাসে ঢুকে অঞ্জলিকে আর দেখতে পেলাম না.... শেষ পর্যন্ত একটা বেঞ্চে বসতেই ও এসে আমার পাশে বসে ছিল আর আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল অনেকখানি.......
ভাগ্যিস হার্টফেল হয়ে যায়নি সেই রক্ষে.....
তারপর থেকে মেয়েটা আমার সাথে বেশ সহজ সরল ভাবে মিশতো...
কিন্তু ওর সমস্যা একটাই ওকে প্রেমের কথা বললেই বড্ড রেগে যেতো....
জলটা যে কোন দিকে গড়াচ্ছে তা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না.....
ওর সাথে আমার প্রায়ই রেস্টুরেন্টে যাওয়া, সিনেমা দেখার সবই হয় তবে হ্যাঁ সঙ্গে আমার সাঙ্গপাঙ্গ গুলোও থাকে....
এমনি একদিন সবাই মিলে একসাথে শপিংয়ে গেছি.....
শপিং শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা ৮ টা বেজে গেল.....
মাঝরাস্তায় অঞ্জলিকে ড্রপ করে বাড়ীর পথ ধরলাম.... বেশ অন্ধকার চারিদিকটা...
এবার সামনের গলি দিয়ে বামদিকে বাঁকলেই সোজা যে রাস্তাটা যায় ওটাই আমার বাড়ির রাস্তা......
কিন্তু না আর এগোতে হয়নি....
সজোরে কেউ লাঠির বারি মারে আমার মাথায়..... আমি টাল সামলাতে না পেরে বাইক নিয়ে উল্টে যায় রাস্তায়.......
বাঁ পা টা যে মুচড়ে গেছে তা বুঝতে পারছি...
আমি উঠে দাঁড়াতে করতে আমার সামনে সন্ডামার্কা 6/7 টা লোক এসে দাঁড়িয়েছে....
আমিও হিরোর মত ঝাপিয়ে পড়লাম তাদেরকে মারতে....
কিন্তু এটা তো আর সিনেমা নয়... তাই এই সন্ডামার্কা লোক গুলো আমায় মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি মেরে দিয়ে চলে গেল......
আমি তখন মাটিতে যন্ত্রণায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি.....
যন্ত্রণার চোটে এক সময় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম......
যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হাসপাতালে.......
আমার বাঁ পা টা প্লাস্টার করা দেখেই বুঝতেই পারলাম পা টা ভেঙে গিয়েছে....
যন্ত্রনাও হচ্ছে খুব....
সন্ডামার্কা লোক গুলোর ওপর খুব রাগ হলো......
সাঙ্গপাঙ্গ গুলো এসে ছুটি করিয়ে নিয়ে গেল....
কিন্তু যারা আসার অপেক্ষায় আমি অস্থির হয়ে আছি সেই অঞ্জলির কোন পাত্তা নেই....
তবে এসেছিল অঞ্জলি দুটো দিন পর.... এসেই কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না তার.....
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম....
আমার সামনে তখন সাঙ্গপাঙ্গ গুলো দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে.....
ইশারায় ওদেরকে বাইরে যেতে বলতেই ওরা ফিক ফিক করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল..... কিন্তু অঞ্জলীর সেদিকে কোন খেয়ালই নেই......
মেয়েটার যে কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম না কিন্তু ভীষণ চিন্তা হতে লাগলো.......
একটু পরে ওর কান্না থামার পর ও যা বলল তা শুনে আমি রীতিমত অবাক....
ওর পলিটিশিয়ান বাবা নাকি আমাদের দুজনকে একসাথে বাইরে দেখেছিল....
তাই সেই অপরাধে আমার ঠ্যাংটা ভাঙিয়ে দিয়ে গেছে ও সন্ডামার্কা গুলোকে দিয়ে.....
মনে মনে ভীষণ রাগ হলো কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না যতই হোক হবু শ্বশুর বলে কথা তো....
তবে ঠ্যাংটা ভাঙলেও একটা ভালো জিনিস হয়েছে.... এই প্রথম অঞ্জলি আমায় ছুঁয়েছে তাও এইভাবে......
সেই দিনই অঞ্জলি আমার বিছানার সামনে হাঁটুগেড়ে বসে কয়েকটা লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়েছিল আমার দিকে....
আর আমি আনন্দের চোটে এক লাফে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু আমার একটা পা যে ভাঙ্গা সেটা আমার মাথাতেই ছিল না...
সঙ্গে সঙ্গে মোচর খেয়ে আবার বিছানায় ধপাস......
আর অঞ্জলী গোলাপ ফুল রেখে তাড়াতাড়ি আমায় ধরল.....
না তেমন লাগেনি তাই সেই যাত্রায় রক্ষা....
আসলে বুঝতেই তো পারছেন ধীরে সে ঝটকা সিনে মে লাগতি হ্যায়.....
তারপরে লুকিয়ে লুকিয়ে বেশ মন.......
তবে না অঞ্জলী আর কোন রিস্ক নিতে চায়নি..... তাই কফি শপ, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল নয় বরং ক্লাস রুম, লাইব্রেরী, কলেজ ক্যাম্পাসে আমাদের প্রেম কাহিনী টা এগোতে থাকলো.....
অঞ্জলীর মা নেই আর ওর পলিটিশিয়ান বাবা ওকে তেমন সময় দিতে পারেনি........
তাই ভালবাসার কাঙ্গাল অঞ্জলি আমার জীবনের সাথে কখন যে মিশে গিয়েছিল একটু ভালোবাসার খোঁজে তা বুঝতেই পারিনি.......
আস্তে আস্তে ও আমার মাকে মা বলতে শুরু করেছিলো আর আমার বাবাকে বাবা...
আর আমার খুশি টা ছিল সবার ওপরে....
সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু সমস্যাটা বাধল আমার জন্মদিন এসে......
হ্যাঁ আমার জন্মদিন অর্থাৎ 9 ই জানুয়ারি....
আমার অজান্তেই আমার মা আর অঞ্জলি মিলে আমার বার্থডে সেলিব্রেট এর জন্য আমাদের ঘর এই ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করল......
তবে সবটাই হচ্ছিল আমাকে গোপন করে....
বিকেলের দিকে আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে যখন ঘরে ঢুকছি তখন আমি রীতিমত অবাক.....
আমার দরজা খুলছে অঞ্জলি.......
লাল টুকটুকে শাড়িতে মেয়েটাকে একদম বউয়ের মত লাগছে...... আমার বউ....
আনন্দেতে আমি এতটাই মুগ্ধ ছিলাম যে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলাম মিনিট পাঁচেক....
বোন পেছনে দাঁড়িয়ে যখন ফিক ফিক করে হেসে উঠলো তখন লজ্জায় মাথা নীচু করে ঘরে ঢুকলাম......
বেশ ভালো করেই সময়টা কাটলো.... কেক কাটা, পায়েস খাওয়া সবই হলো তারপরে রাত্রির নটার সময় বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অঞ্জলীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে......
সেদিন খুব খুশি ছিলাম দুজনে....
কিন্তু সেদিন অঞ্জলীর পলিটিশিয়ান বাবার চোখে পড়ে যাব তা ভাবতেই পারিনি......
আমরা সিগনালে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম......
এমন সময় ওর বাবা তার চারচাকা থেকে নেমে এসে মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল.....
আমার বলার কিছু ছিল না..... ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম.....
ও যেতে চাইছিল না.....
হয়তো ভয় পাচ্ছিল.....
মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম.....
মা আমায় দেখে প্রশ্ন করলো.....
তাকে সবটা জানালাম.....
মাও দেখলাম খুব চিন্তায় আছে.....
রাত্রি বার বার ফোন করলাম....
না কিছুতেই ফোন তুলছে না ও....
কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা সুইচড অফ হয়ে গেল আর আমার চিন্তা তার সাথে সাথে বহুগুণ বেড়ে গেল.....
সেদিন সারা রাত্রি আমার চোখে ঘুম নামলো না....
সকাল হওয়ার প্রতীক্ষায় আমি পাগল হয়ে উঠেছিলাম......
সকাল হতেই ওর খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলাম..... কিন্তু না বন্ধুদের মধ্যে কেউই ওর কোন খোঁজ দিতে পারল না....
এদিকে ওর এতদিন খবর না পেয়ে আমি প্রায় পাগল হয়ে উঠেছি...
শেষ পর্যন্ত ঠিক করে ফেললাম ওর বাড়ি যাব.....
বাইকে স্টার্ট দিয়ে সোজা চলে গেলাম.... দারোয়ান ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিল.....
ওর মুখ টুকু পর্যন্ত দেখতে পেলাম না....
না জোগাড় করতে পারলাম না কোনো খবর......
ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসার সময় ইচ্ছে করছিল নিজের মাথাটা ঠুকে ফাটিয়ে নিতে......
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো পুলিশের ডাকে.....
আমি রীতিমত অবাক.... আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসেছে.....
কিন্তু যখন হাতকরাটা আমার হাতে পড়ল তখন আমার চিন্তা বহুগুণ বেড়ে গেল.......
আমি করেছি টা কি.....
আমার মায়েরো এই একই প্রশ্ন.....
আমার আর আমার মায়ের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পুলিশ জানালো - আমাদের কলেজের ববিতা নামক মেয়েটিকে আমি নাকি রেপ করেছি......
আমার গা টা শিউরে উঠলো.....
আমার কোন কথা শোনার কারোর কোন প্রয়োজন ছিল না.....
আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সোজা ঢোকানো হলো জেলে......
জেলে বদ্ধ হয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো... তবুও কাটছিল কোনক্রমে.... কিন্তু ববিতা যে কেনো মিথ্যে বললো সেটা আমার জানা নেই... আদৌ কি ওর রেপ হয়েছে ?????
নাকি ও মিথ্যে বলছে ?????
কিন্তু কেনো ????
ওর কি লাভ ??????
হাজার প্রশ্ন আমার মাথা ঘুরতে লাগলো কিন্তু কোনো টার উত্তর আমার জানা নেই..... আর জানা সম্ভবো নয়....
পরের দিন আমার সাথে দেখা করতে এলো অঞ্জলি.....
একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে এসেছে....
মেয়েটাকে একদম পরীর মতো দেখতে লাগছে.....
আমি তখন ওকে এটা বোঝাতে ব্যস্ত যে আমি ববিতার সঙ্গে কিছু করিনি...
ববিতা মিথ্যে বয়ান দিয়েছে.....
কিন্তু ও আমার এত কথা শুনলো না... মাঝ রাস্তায় আমাকে থামিয়ে দিয়ে ওর বিয়ের কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল....
ও যে এই জেলে আমাকে বিয়ের কার্ড দিতে আসবে তা আমি আশাও করিনি..
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
- তুমি কি আমায় বিশ্বাস করলে না ?
ও হেসে উত্তর দিয়েছিল
- তা তুমি করোনি বুঝি কিছু ?
আর তা যদি নাই বা করে থাকো
লাভ কি আছে ?
তুমি বেকার.... আর আমার হবু স্বামী
একজন সাকসেসফুল বিজনেসম্যান.....
সুখে থাকবো আমি তার সাথে...
চললাম......
ভালো থেকো.....
চলে গেল ও.... আর আমি একা বসে আছি লোহার রড গুলোর পেছনে..... ওকে ছাড়া তাও আবার এই বন্দি দশায় কেমন করে ভালো থাকতে হয় সত্যি জানিনা......
চারপায়া টাই বসে বিয়ের কার্ড টাকে এখানো অবাক হয়ে উল্টেপাল্টে দেখেছি.....
না বেশিক্ষণ দেখতে হয়নি তার আগেই কার্ড টা ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল থানার ওসি.....
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে রইলাম.....
তিন চার মাস পর ছাড়া পেলাম....
না অঞ্জলীর আর কোনো খবর পেলাম না... আর খবর নেওয়ার কোনো মানসিকতা অবশ্য আমার ছিল না...
আমার সাঙ্গপাঙ্গ গুলো আমাকে বাড়ি নিয়ে গেল.....
বাড়ির লোক গুলো আমাকে এতদিন পর দেখে একটু হাসলো.....
না এবার আমাকে কিছু একটা করতে হবে....
আমি অঞ্জলি কে আর ওর পলিটিশিয়ান বাবা কে দেখিয়ে দিতে চাই যে বেকারদেরো একটা মন আছে....
কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হাতে অত টাকা কই.....
পড়াশোনাও তেমন একটা মাথায় ঢোকে না.......
কিন্তু আমি রান্না করতে খুব ভালোবাসি..... তাই ঠিক করলাম রান্না নিয়ে কিছু একটা করতে হবে....
একটা ছোটো খাবার দোকান খুলে ফেললাম পাড়ার মোড়ে......
বেশ ভালোই জমে উঠেছে ব্যবসা কারণ আমার হাতের রান্না টা কিন্তু বেশ খেতে.....
ব্যবসায় লাভ বেশ ভালই হতে থাকলো... আমি ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততম মানুষের পরিণত হলাম...... এমনকি পরিবারের লোক গুলো কেউ একটু সময় দিতে পারিনি দু বছরে......
এখন বর্তমানে আমি পাঁচটা রেস্টুরেন্টের মালিক.....
না সবগুলোতে আমার থাকা সম্ভব হয় না.....
আমি শুধু দেখাশোনা করি.....
আজ আমার কাছে যথেষ্ট অর্থ আছে...... তাই আজ আমি অঞ্জলীর সাথে দেখা করতে চাই..... ওকে দেখিয়ে দিতে চাই যে যেই বেকার কে ও একদিন দাম দেয় নি সেই বেকার আজ নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে.....
খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই অঞ্জলির শ্বশুর বাড়ির ঠিকানাটা জোগাড় করতে পারিনি....
তাই শেষ অবধি সাহসে ভর দিয়ে অঞ্জলীর পলিটিশিয়ান বাবার দরজাতেই আজ আমি উপস্থিত....
বাইকটা স্ট্যান্ড করে ঢুকলাম...
দারোয়ান টা আজও আমায় ঢুকতে দিতে চায় না.......
কিন্তু আজ আমায় ঢুকতেই হবে তাই একপ্রস্থ ঝগড়াই হয়ে গেল আমাদের...... ঝগড়া শুনে ওর পলিটিশিয়ান বাবা ততক্ষণে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে..... আমার দিকে একবার তাকিয়ে তিনি দারোয়ান কে ইশারা করলেন আর সে আমাকে গেট ছেড়ে দিল....
আমি সোজা জামার কলার টা ঠিক করে ভেতরে ঢুকে গেলাম মাথা উঁচু করে.... উনি সোফায় বসতে বললো....
আমি অবাক হলাম.... যার একদিন মেরে ঠ্যাঁ ভেঙ্গে দিয়েছিল আজ তাকেই সোফায় বসতে দিচ্ছে.....
অবাক হলেও কিছু বললাম না....
স্পষ্ট ভাবে জিজ্ঞেস করলাম অঞ্জলির ঠিকানা.....
কারণটা জিজ্ঞেস করলো... কারণটা বিস্তারিতভাবে জানালাম আসলে ওদেরকে জানাবার জন্যই তো আমার ওখানে যাওয়া.....
অবশেষে পলিটিশিয়ান রাজি হয়ে গেল....
কালকেই আমায় নিয়ে যাবে বললো.....
সেদিনের মত ফিরে এলেও পরের দিন সকালে যাবার জন্য ঠিক করলাম.... রাত্রে গিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়.....
পরেরদিন আবার মুখোমুখি হবো... অঞ্জলিকে দেখতে পাবো দুটো বছর পর....
পরের দিন সকালেই ঠিক সময় মতো পৌঁছে গেলাম....
ওর বাবা বোধহয় আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো.... আমায় দেখে নিজের গাড়িতে উঠে বসতে বললো....
আমি রাজি নই.... আমি আমার বাইকে যেতে চাইলাম......
কিন্তু শেষ অবধি কোন কথাই শুনলো না পলিটিশিয়ান.... গাড়িতে উঠে বসলাম.......
কে জানে কোথায় নিয়ে যাবে আমায়.... হয়তো আমায় খুনি করে ফেলবে... বলা তো যায়না পলিটিশিয়ান বলে কথা.... মনের মধ্যে হাজার চিন্তা ভীড় করে আসলো.....
বেখেয়ালি ভাবে রাস্তাটা পার হয়ে গেল....
কোন একটা বাড়ির সামনে এসে যখন গাড়িটা ঢুকলো সামনের গেটে লেখা নামটা দেখে আমি তখন রীতিমত অবাক.....
তাও কিছু বললাম না.... পলিটিশিয়ান- এর পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লাগলাম.....
একটু পরেই গিয়ে দাঁড়ালাম 13 নম্বর রুমের সামনে.....
আর তারপর সেখানেই দেখতে পেলাম অঞ্জলীকে..... হ্যাঁ আমার অঞ্জলীকে.... আজ সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন........
আমার চোখে জল এসেছে... অপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম পলিটিশিয়ানেরো চোখে জল........
পলিটিশিয়ানের চোখেও যে জল আস্তে পারে সেটা আমার কল্পনার অতীত.....
অঞ্জলি আমায় চিনতে পারলো না...... ওর বাবাকে তেড়ে মারতে এলো...
আমি বাধা দিলাম ওকে... আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ও কিছুটা শান্ত হয়ে গেল....
দুজনে বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে.... গিয়ে বসলাম গাড়ির সিটে....
পলিটিশিয়ান জানালো নিজের মেয়ের ভালোর জন্যই নাকি ববিতা কে দিয়ে আমাকে মিথ্যে রেপ কেস এর ফাঁসিয়েছিল.....
অঞ্জলি সবটাই জানতো কিন্তু তাকে হুমকি দিয়েছিলো আমার সাথে আর দেখা করলে বা মিলামেশা করলে আমাকে খুন করে ফেলবে লোক লাগিয়ে....
অঞ্জলি এর আগেই বাবার আসল মূর্তিটা দেখেছিল যখন লোক লাগিয়ে আমার পা ভেঙ্গে দিয়েছিল.... তাই বাবার কথাটা সে অবিশ্বাস করতে পারেনি.....
বেচারী মেয়েটা আমার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়..... গুটিয়ে নেই গোটা পৃথিবীর থেকে..... বন্দি করে ফেলে নিজেকে নিজের ঘরে......
মাসখানেক পরেই ও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল.....
নিজের একমাত্র মেয়ের এই পরিস্থিতিতে সত্যি একদম চুপ করে গেছে পলিটিশিয়ান .....
আর আমি......
আমি যাকে এতদিন বেবাফা ভেবে এসেছি সেই পাগলী মেয়েটার জন্য আজ দু চোখের জল পড়ছে......
কতটাই না নিচু মন আমার.....
পাগলিটা আমার জন্য না জানি কত কিছু সহ্য করেছে.......
আর আমি..... ছীঃ ছীঃ ছীঃ
সেদিনই আমি ওর পলিটিশিয়ান বাবাকে কথা দিলাম যে আমি বিয়ে করব অঞ্জলিকে.......
পলিটিশিয়ান বোধহয় এতটা খুশি জীবনে কখনো হয়নি..... আমার হাত দুটো চেপে ধরলো....
কিন্তু আমার সেরকম কোন ইচ্ছে ছিল না......
ওর হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে আমি এগিয়ে চললাম 13 নম্বর রুমের দিকে......
অঞ্জলির সামনে গিয়ে বার বার নিজের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকলাম..... বারবার বলতে থাকলাম নিজের পরিচয়.... আমাদের দেখা হওয়া..... আমাদের প্রেম....... দুচোখে জল উপচে পড়ছে আজ.......
অঞ্জলি আমাকে চিনতে পেরেছে....
কিন্তু কিছুতেই আমাকে ওর কাছে যেতে দিচ্ছে না...... বিড়বিড় করে আওড়ে যাচ্ছে
- বাবা খুন করে ফেলবে.....
বাবা খুন করে ফেলবে....
মেয়েটার অবস্থা সত্যি খুব খারাপ... কিন্তু আমি আমার অঞ্জলীকে এখানে পাগল দের মতো রাখবো না..... বাড়ি নিয়ে যাব ওকে......
এসে কথা বললাম পলিটিশিয়ানের সাথে......
পলিটিশিয়ান কথা দিলো দুই দিনের মধ্যে নিজেই সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করে দেবে.....
দুদিন পরেই আমাদের বিয়ে ঠিক হলো.....
পাগলিটাকে আবার কাছে পাবো.... ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো.... সত্যি বড্ড ভালোবাসি আমার পাগলিটাকে.....
এর মাঝে গিয়ে আবার একদিন দেখা করে এসেছি পাগলিটার সাথে.... কিন্তু এবারও ও আমায় দূরে ঠেলে দিয়েছে একই অছিলায়
বাবা খুন করে ফেলবে.......
বাবা খুন করে ফেলবে......
বাবা খুন করে ফেলবে....
পরেরদিন সকালে গেলাম আমার হবু বউকে আনতে... তাও আবার মেন্টাল হসপিটাল থেকে....
সত্যি ভাবা যায়.... !
অন্য কেউকে হলে হয়তো মেন্টাল হসপিটালের লোকেরা ছাড়তো না...
কিন্তু ওর বাবার পলিটিশিয়ান হিসাবে নামডাক থাকায় আমাদের তেমন কোন ঝামেলা পোয়াতে হলো না.....
র্ফম ফিলাপ করে সোজা এগিয়ে গেলাম 13 নম্বর রুমের দিকে....
চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে গেল একটা লোক.....
পাগলিটা তখন ঘরের এক কোণে বসে আছে......
ওর বাবাকে দেখে ও আরো সেঁধিয়ে গেলো কোনের দিকে.....
আমি কোনক্রমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওকে ফিরিয়ে আনলাম বাড়িতে.....
না ও আর নিজের বাড়ি যেতে চাইনি তাই বিয়ের আয়োজন টা সমস্ত টাই করা হয়েছে আমার বাড়িতে......
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে....
আমি ধুতি পরে একদম তৈরি.....
আমার উত্তেজনা তুঙ্গে....
আমার বেডরুমে বসিয়ে পাগলিটাকে বউ সাজাচ্ছে মা আর বোন মিলে.....
আজ আমি ভীষণ... ভীষণ খুশি.....
আমার পাগলিটাকে আমি এতদিনে কাছে পাবো.....
সত্যি ভাবা যায়..... !!!!
গোটা ঘরটা গোলাপ ফুলের সাজানো হয়েছে আজ.....
সানাই বেজে উঠেছে......
চারিদিকে আলো ঝলমল করছে.....
এর মধ্যে আমার চেলা সাঙ্গপাঙ্গ গুলো এসে হাজির..... বিল্টু দাঁত বের করে বললো
- গুরু তোমার হিল্লে হয়ে গেল বলো...
ওরা এখনো জানেনা অঞ্জলি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে.....
আমি বলিওনি.....
আমি জানাতে চাই না..... কারন আমার কাছে ও একদম স্বাভাবিক.... তাই শুধু শুধু ওকে দয়ার পাত্রী বানানোর ইচ্ছা আমার নেই.....
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বসে পড়লাম বিয়েতে.....
পুরুত মশাই মন্ত্র পড়া শুরু করে দিয়েছে....
আর আমার চোখ অপেক্ষা করছে আমার পাগলিটাকে লাল বেনারসিতে আমার বউ হিসেবে দেখার জন্য....
সত্যি প্রায় 5 বছর আমি অপেক্ষা করেছি.....
পুরুত মশাই অঞ্জলীকে নিয়ে আসার জন্য বললেন..... কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও অঞ্জলি এলো না.... তার বদলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার বোন.......
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে কি যে বলল কিছুই বুঝলাম না..... কিন্তু ভয় তখন আমার হাত পা পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে....
দৌড় লাগালাম আমার বেডরুমে..... ওখানে সাজানো হচ্ছিল অঞ্জলীকে... দরজাটা হাট করে খোলা.... আর সিলিং ফ্যান থেকে বেনারসি পড়ে ঝুলছে পাগলিটা......
একদম কোনের মতো দেখতে লাগছে ওকে..... শুধু চোখদুটো বন্ধ....
চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলাম ওর পা দুটো.....
সবাই এসে গলার ফাঁস টা খুলে নামালো.....
কিন্তু না পাগলি আর চোখ মিলছে না..... আমার মামাতো ভাই একজন ডাক্তার.... সে সঙ্গে সঙ্গে পালস চেক করে মুখটা নামিয়ে নিল......
মুখ নামিয়ে নেওয়ার অর্থ যে কি সেটা আমিও বুঝি..... কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না যে পাগলিটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে............
জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরলাম মাটিতে...
জ্ঞান ফিরলো পরের দিন সকালে....
হ্যাঁ পাগলিটা সত্যিই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে.....
চুল্লিতে ওর দেহটা পোড়াবার জন্য একদম প্রস্তুত.....
আমিই সবার শেষে এসে পৌঁছেছি....
এক চিলতে সিঁদুরে ওর সিঁথি টা লাল করে দিলাম....
ওর এটা প্রাপ্য ছিল তাই আজ ওর প্রাপ্যটা ওকে দিয়ে দিলাম.....
পাগলিটাকে ঢুকিয়ে দিল চুল্লিতে.... পাগলির পা দুটোও শেষে ঢুকে গেল.... ভেতরের ওই অসম্ভব তাপ কী করে সহ্য করে পাগলিটা...... !
কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ.....
আমার বিয়ের স্বপ্ন শেষ.....
আর আমার বিয়ের কনেও শেষ.....
শুকনো মুখে ফিরে এলাম ঘরে..... আমার বেডরুমে পা দিতে আর ইচ্ছে করছে না.....
তাও ঢুকলাম.....
দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখতে পেলাম লাল রং পেন্সিলের টুকরো দিয়ে গোটা দেওয়াল জুড়ে লেখা
"বাবা খুন করে ফেলবে"
কালকে রাত্রে উত্তেজনার বশে এটা খেয়ালই করিনি.....
সিলিং ফ্যানটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি..... বনবন করে ঘুরছে ওটা...... আমার মাথাটাও ঘুরতে শুরু করলো .......
ওই সিলিং ফ্যান টাতেই যে আমার পাগলিটা শেষ আশ্রয় খুঁজে ছিল.....
ইচ্ছে হলো আমিও ওটাতে গামছা জড়িয়ে ঝুলে পরি.....
আজ তিন বছর কেটে গেল...
না না আমি সুইসাইড করিনি....
আমি বেঁচে আছি....
আমার পাগলীকে ছাড়াই আমি বেঁচে আছি.....
মা বিয়ের জন্য অনেক বলেছে কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি নয়.....
একেবারেই না......
কারণ আমি তো বিবাহিত....
আজকে রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ি ফিরে দেখলাম বাড়িতে অতিথি এসেছে............
ঠিক অতিথি নয়.... আসলে কন্যাপক্ষ এসেছে আমাকে দেখতে....
তাদের প্রশ্নের অপেক্ষা না করেই আমি জোড়হাতে তাদেরকে বলে উঠলাম
- আমি বিবাহিত.....
আপনারা আসতে পারেন.....
লোকগুলো কটমট করে আমার দিকে তাকালো, মাকে দু কথা শুনিয়ে উঠে গেল.....
মা কিছু বলার আগেই আমি নিজের বেডরুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম.......
ঘরের দেওয়াল জুড়ে এখনো লেখা আছে -
"বাবা খুন করে ফেলবে"
************************************************************************************
লেখিকা - রিকা টাট
বন্ধুরা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাবেন। এবং গল্পটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই এই গল্পের লিঙ্ক শেয়ার করুন।
পরবর্তী সময়ে এরকমই আরও সুন্দর সুন্দর গল্প, মজার ছড়া, কবিতা পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ "নকশীকাঁথার গল্প" এ আসুন।
এছাড়াও আমাদের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে যেখানে আপনারা একই ধরনের টপিকের উপর ভিডিও দেখতে পাবেন। আপনারা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। আমাদের ইউটিউব চ্যানেল লিঙ্ক নীচে দেওয়া হলো...

No comments:
Post a Comment