ছোট্ট মেয়ে স্টেলা তার বাবা-মায়ের হাত ধরে বাবার কাজের বদলির সূত্রে তার ইংল্যান্ড ছেড়ে ভারতে আসা। আজ শোনাবো এই ছোট্ট স্টেলার গল্প।
সাল 1942, ভারত তখন পরাধীনতার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে.....
এমন সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরির সূত্রে ভারতে যাবার নির্দেশ পেল স্টেলার বাবা.....
তাই সব গুছিয়ে নিয়ে জাহাজে চেপে পারি দিল স্টেলা তার বাবা ও মা এর সাথে....
এর আগে কখনো সমুদ্র দেখেনি স্টেলা.. তাই সে আজ দারুণ খুশি.....
বিশাল নীল সমুদ্র আর বড় বড় ঢেউয়ের গর্জনে নিজের দেশে ছাড়বার দুঃখ যেন কোথায় হারিয়ে গেল তার......
স্টেলা বরাবরই একলা থাকতে পছন্দ করে...
খুব বেশি কারো সাথে মেলামেশা করে না সে..
কিন্তু তবুও চেনা পরিবেশ, বন্ধু আর স্কুল ছেড়ে আসবার সময় খুব কেঁদেছিল সে...
তার বাবা ও মা তাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল....
আজ স্টেলাকে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে নীল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কাটলো....
আজ নিয়ে তিন দিন হয়ে গেল জাহাজে চেপেছে তারা.... তাই তার বাবা ও মায়ের মুখে বিরক্তির ভাব... কিন্তু স্টেলার বেশ লাগে....
রাতে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে নীল সমুদ্রের সাথে তারায় ভরা আকাশ বড়ো ময়াবী লাগে, ভোরের আবছা আলোয় ঘন কুয়াশায় মোড়া সমুদ্রকে বড়ো রহস্যময় মনে হয় তার.... প্রকৃতি তার খুবই প্রিয়.... প্রকৃতিকে তার বড়ই আপন মনে হয়......
তাই এই কটা দিন কীভাবে যে কেটে গেল বুঝতে পারেনি সে.....
কাল তাদের নামতে হবে, বাবার মুখে এ কথা শুনে দুঃখ পেল ছোট্ট স্টেলা,
- এখনই? এত তাড়াতাড়ি কেন?
এই প্রশ্ন করল তার বাবাকে, মেয়ের প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলল তার বাবা.... তারপর মেয়েকে বলল চলো মা পরে আবার আসবো আমরা জাহাজে চেপে বেড়াতে যাবার জন্য....
বাবার উত্তরটা খুব একটা পছন্দ হয়নি ছোট্ট স্টেলার.... কিন্তু কিছুই করার নেই তার.....
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি জাহাজের ডেকে বেরিয়ে এলো সে.... ভোরের শান্ত পরিবেশ আর একরাশ কুয়াশায় ঘেরা রহস্যময় নীল সমুদ্র কে শেষ বারের জন্য বিদায় জানালো স্টেলা.... তারপর ভারতের মাটিতে প্রথম বার পা রাখল স্টেলা.. বাবা মায়ের হাত ধরে....
শুরু হলো জীবনের নতুন এক অধ্যায়।


No comments:
Post a Comment